প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
৯এপ্রিলঃ মালয়েশিয়ায় ১ লাখ অবৈধ বাংলাদেশীর বৈধ হওয়ার সময়সীমা শেষ
হচ্ছে কাল। তিন দফা সময় বাড়ানোর পরও ১০ই এপ্রিল সে দেশের সরকারের সর্বশেষ বেঁধে
দেয়া সময়ে অবৈধ শ্রমিকদের হাতে তুলে দিতে পারেনি এমআরপি। নতুন করে সময় না বাড়ানো
হলে ১ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র ও
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে
কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ
হাইকমিশন শ্রমিকদের এমআরপি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার সময়
বাড়ানোর জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে। সূত্র জানায়,
মালয়েশিয়া সরকার গত জুনে দেশটিতে কর্মরত প্রায় ৩ লাখ শ্রমিককে
শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ছিল প্রত্যেককে শ্রমিককে মেশিন
রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরবরাহের শর্ত। কিন্তু বাংলাদেশ বার বার শর্ত পূরণে
ব্যর্থ হয়েছে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, গত তিন মাসে হাইকমিশন হাতে লেখা এবং এমআরপি পাসপোর্ট সরবরাহ করতে
পেরেছে এক লাখেরও কম। এছাড়া হাইকমিশনে দু’লাখের বেশি শ্রমিকের পূরণ করা এমআরপি ফরম
জমা পড়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক আগে থেকেই এমআরপি দেয়া শুরু
হয়েছে। এখনও অনেক শ্রমিক ফরম পূরণ করেনি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট
একজন কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী
শ্রমিকদের ১২ই জানুয়ারির মধ্যে পাসপোর্টের জন্য ফরম পূরণ করেছে মর্মে ডকুমেন্ট
প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছিল। ‘সিরিয়াল’ বা তালিকা অনুযায়ী পাসপোর্ট তৈরি করতে
যে সময় লাগবে সেটা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ মেনে নেবে বলে ঘোষণাও ছিল। ইতিমধ্যে ২ লাখ
২০ হাজার শ্রমিক এমআরপি’র
জন্য ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছে। বাকি আরও এক লাখের মতো শ্রমিক এখনও ফরম পূরণ
করেননি। কিছু পাসপোর্ট ছিল দালালদের কাছে- যেগুলো জমা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে
হাইকমিশন। কিন্ত এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরম পূরণ করে জমা নিতে পারেনি
হাইকমিশন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, মালয়েশিয়ায় এমনিতেই শ্রমিকের প্রয়োজন
রয়েছে। তারা চান, যেসব শ্রমিক সেখানে রয়েছেন- তাদের যত
সহজে বৈধ করে নেয়া যায়। এজন্য সে দেশের কর্তৃপক্ষ ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত এমআরপি দেয়ার
সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। এ সময়ের মধ্যে সব শ্রমিককে পাসপোর্ট সরবরাহ করার প্রক্রিয়ায়
আনা সম্ভব হচ্ছে না। আরেক দফা সময় বাড়ানোর জন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সপ্তাহে মালয়েশিয়া যাওয়ার
কথা রয়েছে। এ সময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে খোলার জন্যও প্রতিনিধি দল
সংশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় কর্মরত সাড়ে তিন লাখ শ্রমিকের ‘থাম প্রিন্ট’ বা আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে গত বছরের
সেপ্টেম্বরে। ৩০০টি আইটি প্রতিষ্ঠান এক মাস ধরে শ্রমিকদের থাম প্রিন্ট নিয়েছে। এর
পর শ্রমিকদের নতুন পাসপোর্ট নেয়ার কথা থাকলেও এখন প্রায় ২ লাখ শ্রমিক পাসপোর্ট
নেননি। ফলে তারা সে দেশে পাসপোর্ট ভিসাবিহীনভাবেই কাজ করছেন। মালয়েশিয়া
কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোন শ্রমিক পাসপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় অংশ
নিতে ব্যর্থ হলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ কারণে এখনই আশঙ্কা ছড়িয়েছে হাইকমিশন
মাত্র চার দিনে প্রায় এক লাখ শ্রমিকের এমআরপি ফরম জমা নেয়ার কাজ শেষ করতে পারবে
না। তবে হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা নির্ভয় দিয়েছেন। বলেছেন, সময় বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরেক দফা সময় বাড়ালে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত শ্রমিকদের পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত
হবে। তিনি জানান, শ্রমিকদের হাতে লেখা ও এমআরপি দু’ধরনের পাসপোর্টই দেয়া হচ্ছে। এজন্য অতিরিক্ত
লোক নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অফিস থেকে যাওয়া ৫৮ জন
কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন-রাত কাজ করছেন। এমআরপি প্রকল্পের দু’টি গ্রুপ সেখানে রয়েছে। যেসব শ্রমিক দেশে
ফিরে যাওয়ার জন্য থাম প্রিন্ট দিয়েছেন- কেবল তারাই দেশে ফিরবেন, অন্যরা নয়। প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড.
জাফর আহমেদ খান মানবজমিনকে বলেন, মালয়েশিয়ায় নতুন করে
শ্রমশক্তি রপ্তানির বাজার খুলছে। সেখানে আরও কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিলতা এখনও আছে।
আলোচনার জন্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের মালয়েশিয়া সফরের প্রচেষ্টা
চলছে বলে জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment